"জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ"
জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন সোনালী মসলা জাফরান খাওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্পূন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান পেয়ে যাবেন।
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মধ্যে শুধু "জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ" সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়া ও জাফরান সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে।
ভূমিকা | জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ
জাফরান একটি সুগন্ধি ফুলের কিছু ক্ষুদ্র অংশ যার গন্ধ মধুর মতো। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা। জাফরান এর পুষ্টি উপাদান রয়েছে পর্যাপ্ত এবং এটি ভিটামিনের একটি চমৎকার উৎস।এই নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লালচে কমলা রঙের এক রাজকীয় মসলা যা কেবল স্বাদ বা ঘ্রাণেয় নয় বরং উপকারিতায় ও অতুলনীয়। জাফরান যার আরেক নাম সোনালী মসলা।
আরো পড়ুনঃ লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও মূল্যবান মসলাগুলোর মধ্যে একটি। ছোট এই মসলার কাঁপন তুলে দিতে পারে আমাদের শরীর ও মন উভয় জগতে।জাফরান শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না এটি মানসিক প্রশান্তি, ত্বকের উজ্জ্বলতা, হৃদরোগ প্রতিরোধ ও হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ বহু স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর।
জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
এটি শুধু রান্নার রঙ আর স্বাদ বাড়াতেই নয় বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের দিক থেকে ও অসাধারণ উপকারে আসে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সোনালী মসলা জাফরান খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও অবসাদ লেগেই থাকে। এ থেকে মুক্তি পেতে জাফরান একটা প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। এতে থাকে সেরোটনিন হরমোন। তাই জাফরান খেলে মস্তিষ্কে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়ে। যা মন ভালো রাখে ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ কমাতে এটি খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ত্বক হোক উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়
যারা প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে চান তাদের জন্য জাফরান একটি কার্যকরী উপায়। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের দাগ ছোপ কমায় এবং ব্রণ প্রতিরোধে ও সাহায্য করে। সেই কারণে অনেক বিউটি প্রোডাক্টে ও জাফরান ব্যবহৃত হয়। আবার ঘরোয়া ফেসপ্যাক এর সাথে দুধ ও জাফরান মিশিয়ে ব্যবহার করলেই চোখে পড়ার মতো ফল পাওয়া যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জাফরানে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে এবং শরীরকে করে তোলে রোগমুক্ত ও সতেজ।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
জাফরানে থাকে পটাশিয়াম ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টৈর সুস্থতা বজায় রাখে। এর পাশাপাশি এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে রাখে সুস্থ ও সক্রিয়। এটি ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সহায়তা করে।
হজমে সাহায্য করে
এটি খেলে পাচনতন্ত্র সক্রিয় হয় এবং গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের সমস্যা কমে। যার ফলে হজম শক্তি বাড়ে এই কারণে পেটের গন্ডগোল কম হয় এবং পেটকে রাখে হালকা ও আরামদায়ক। এদিকে জাফরানে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। কিসমিস এবং জাফরান ফাইবারের ভালো একটা উৎস।
চোখের জন্য ও দারুণ উপকারী
এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড চোখের রেটিনার জন্য ভালো এবং বয়স জনিত কারণে চোখের সমস্যা ও প্রতিরোধ করে। নিয়মিত খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধে ও কাজ করে।
নারীদের পিরিয়ডের (Dysmenorrhoea) ব্যথা কমাতে সহায়ক
জাফরান প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে দারুন কাজ করে, যা মাসিকের সময় নারীদের তলপেটের ব্যথা হতে আরাম দেয়। এছাড়াও পিরিয়ড শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
চুল পড়া রোধ করতে জাফরান
আমরা অনেকেই চুল পড়া সমস্যায় ভুগে থাকি। মাথার চুল পড়ে মাথা টাক পড়ে যায়। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য জাফরান বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জাফরান খাওয়া যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তেমনি এটা ব্যবহারে মাথার চুল পড়া ও প্রতিরোধ করা যায়।যষ্টিমধু এবং দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
দাঁত ও মাড়ির সমস্যা দূর করে
দাঁত ও মাড়ির সমস্যা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। আর এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জাফরান খুবই কার্যকর। সামান্য জাফরান নিয়ে মাড়িতে মেসেজ করলে মাড়ি, দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং মুখের ভেতরে দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ সবল রাখার জন্য জাফরান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত জ্বর কমাতে
এতে থাকা ক্রোসিন নামক উপাদানটি অতিরিক্ত জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
ক্লান্তি দুর্বলতা ও রক্তস্বল্পতা দূর করতে
আপনার যদি সব সময় ক্লান্তি ভাব, দুর্বলতা লাগে এবং রক্তশূন্যতার মত বড় সমস্যা থাকে তবে প্রতিদিন জাফরান এবং কিসমিস দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন। কেননা এতে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। এছাড়াও দুধে আছে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম যা আমাদের দূর্বলতা ও
দুর্বল হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। দুধ এবং কিসমিস ক্যালসিয়ামের বড় একটা উৎস। তাই আপনার হাড়কে যদি মজবুত ও সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত এই মিশ্রনটি খেতে পারেন।
জাফরান খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। তাই জাফরান এর ক্ষেত্রে ও সেটা ঠিক। যখন ব্যবহার করা সাধারণত নিরাপদ তবে অতিরিক্ত ব্যবহার বা সঠিক উপায় ব্যবহার না করলে এর কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন- মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, এলার্জির প্রতিক্রিয়া, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা,
এমনকি নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, চোখের রং খুব দ্রুত হলদে হয়ে যাওয়া এমন সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত জাফরান খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। দিনে ৫-৬ টি সুতার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আর গর্ভবতী নারীদের জন্য জাফরান না খাওয়াই ভালো।
পুরুষদের জন্য জাফরানের কি কি উপকারিতা রয়েছে
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন পুরুষদের জন্য জাফরানের কি কি উপকারিতা রয়েছে এই বিষয় সম্পর্কে। আমার এই আর্টিকেলের মধ্যে এতক্ষন জাফরান খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা জানবো পুরুষদের জন্য জাফরান খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে সেই বিষয় সম্পর্কে। জাফরান ভেজানো পানি নিয়মিত পান করলে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
কেননা এটি এন্টি ডিপ্রেসেন্ট উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিলিগ্রাম জাপান একভাবে ৩০ দিন খেলে ইরেক্টাইল ফাংশন উন্নত হয়। এছাড়াও জাফরান ভেজানো পানি নিয়মিত ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এটি দুধ এবং কিসমিসের সাথে খেলে বিবাহিত পুরুষদের যৌনজীবন উন্নত করতে সাহায্য করে।
জাফরান খাওয়ার সঠিক উপায়
- জাফরান দুধ - রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধে ২-৩ টি জাফরান ভিজিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- রান্নায় ব্যবহার - বিরিয়ানি, পায়েস বা মিষ্টান্ন খাবারে সামান্য জাফরান দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ে। জাফরান শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, এটি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও সহায়ক।
প্রকৃতির দেওয়া এক রাজকীয় উপহার হল জাফরান। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি শুধু শরীর নয় মন ও সৌন্দর্যতে ও এনে দিতে পারে কাঙ্খিত পরিবর্তন। তাইতো জাফরানের পুষ্টিগুণ ঠিকমতো পেতে হলে এখন থেকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জাফরান রাখুন আর থাকুন দীপ্তিময় ও সুস্থ।
রূপচর্চায় জাফরান
জাফরান খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে অনেক তেমনি রূপচর্যচায় জাফরান খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জাফরানে আছে হোয়াইটেনিং প্রোপার্টি, যা ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
উপকরণঃ
- ৫-৬ টি জাফরানের সুতা।
- ১/২ কাপ টক দই অথবা দুধের স্বর বা দুধ।
- ২-৩ টা গোলাপের পাপড়ি।
- ১ টেবিল চামচ চন্দন বা মুলতানি মাটি।
- ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে জাফরান গুলো ২-৩ ঘন্টা তরল দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে যতক্ষণ এই দুধের রং হলুদাভ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত। তারপর গোলাপের পাপড়ি গুলো ভালো করে ধুয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর দুধ, জাফরান, গোলাপের পাপড়ি পেস্ট, মুলতানি মাটি একত্রে গোলাপজলে গুলিয়ে নিন। এখন এই পেস্ট মুখের ত্বকে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত জাফরান এর এই ফেসপ্যাক টি ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে গভীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত। আরে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আপনিও ব্যবহার করতে পারেন এই ফেসপ্যাকটি।
লেখকের শেষকথা | জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে সম্পূন্ন পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন জাফরান খাওয়ার উপকারিতাঃসোনালী মসলার ১০টি স্বাস্থ্যকর গুণ সম্পর্কিত সকল তথ্য।আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন জাফরান খাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে।
এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ফলো করুন। আর আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url